হাদি হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চায় দিল্লি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ভারত। দিল্লি জানিয়েছে, ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে দ্রুত সিদ্ধান্তে না যাওয়া বা ভারতের ওপর দোষারোপ করা ঠিক নয়; বরং দায়ীদের শনাক্ত করতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত জরুরি। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ও বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভের উত্তাপের মধ্যেই বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ডেকে এ বার্তা দিয়েছে ভারত।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস'র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছ, ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে একে–অপরের কূটনীতিকদের ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ। একই সময়ে দিল্লিতে বাংলাদেশের দূতাবাসের দিকে মিছিল ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মূলত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের বাইরে ‘দুঃখজনক ঘটনা’ এবং শিলিগুড়ির ভিসা সেন্টারে ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে প্রতিবাদ জানান।
দিনের শেষ দিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ–মিয়ানমার বিভাগের প্রধান জয়েন্ট সেক্রেটারি বি শ্যাম বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ডেকে পাঠান। সেখানে তাকে জানানো হয়, বাংলাদেশের ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদি হত্যার ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার।
পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত একাধিক সূত্রের বক্তব্য, ‘ভারতকে দায়ী করে আগেভাগে মন্তব্য না করে, কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত’ বলে জানানো হয়। তাদের মতে, হাদি হত্যায় ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগের ভিত্তি নেই; অথচ এই অভিযোগ ঘিরে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনে ঢোকার চেষ্টাও হয়েছে।
সাম্প্রতিক এসব ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি করেছে এবং সম্পর্ক ইতোমধ্যেই ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। এনিয়ে গত ১০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার প্রণয় ভার্মাকে ঢাকায় তলব করা হয়েছে। আর এর আগে রিয়াজ হামিদুল্লাহকেও দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল প্রতিবাদের জন্য।
তবে মঙ্গলবারের ঘটনাবলী নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য দেয়নি।
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসীর গুলিতে মারাত্মক আহত হন ওসমান হাদি। রিকশায় থাকা অবস্থায় তার মাথায় গুলি লাগে। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর সরকারিভাবে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। তবে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে (এসজিএইচ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরেই তাকে সমাহিত করা হয়।
হাদির মৃত্যুর ঘটনায় হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন হাদি।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। তার দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতা এবং জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিভিন্ন মামলায় এজাহারভুক্ত অনেক আসামিও দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ ওসমান হাদির হত্যার সঙ্গে জড়িতরা ভারতের দিকে পালিয়ে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন তলানিতে পৌঁছেছে। দুই দেশের কূটনৈতিক স্থাপনার সামনে একে অপরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং অবস্থান দাখিলের দৃশ্যও নিয়মিত দেখা যাচ্ছে।
এসি//