হিমেল বাতাসে কাঁপছে পঞ্চগড়, ডিসেম্বরে শৈত্যপ্রবাহের আভাস
উত্তরের আকাশে ভোরের আলো ফোটার আগেই পঞ্চগড়ের জনপদে অনুভব করা যায় শীতের নরম অথচ কাঁপুনি জাগানো স্পর্শ। হিমালয়ের কাছাকাছি এই সীমান্ত জেলা যেন প্রতি বছরই দেশের প্রথম শীতবার্তা নিয়ে হাজির হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না—হিমেল বাতাস আর জমে থাকা অতিরিক্ত আর্দ্রতা মিলেমিশে তৈরি করেছে শীতের ঘণ উপস্থিতি। সকালে কনকনে ঠান্ডার আঁচে মানুষ কাঁপলেও সূর্য ওঠার পর কিছুটা স্বস্তির উষ্ণতা ফিরে আসে প্রকৃতিতে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) ভোর ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস; বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। একই দিন সকাল ৯টায় রেকর্ড করা হয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা—তেঁতুলিয়ায় ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ঠিক আগের দিন মঙ্গলবার তাপমাত্রা নামছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রিতে, যা এ মৌসুমের অন্যতম শীতলতম রেকর্ড। সোমবার ছিল ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর গত রোববার সকাল ৯টার দিকে নেমেছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর্দ্রতা তখন ছিল ৭৬ শতাংশ; ভোর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে ছিল পুরো অঞ্চল।
দিনের বেলায় অবশ্য ভিন্ন চিত্র। তেঁতুলিয়ায় গত দশ দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঘুরপাক খাচ্ছে ২৯ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। দিন-রাতের এই তাপমাত্রার তীব্র বৈষম্য মানুষকে আরও বেশি শীত অনুভব করতে বাধ্য করছে। পঞ্চগড় শহরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, “দিনে রোদে হাঁটাই কষ্টকর, গরমই মনে হয়। কিন্তু রাত হলেই ঠান্ডা এমনভাবে নামে যে কম্বল ছাড়া থাকা যায় না।”
প্রতি বছর শীতের পূর্বাভাসদাতা হিসেবে পরিচিত তেঁতুলিয়ার আবহাওয়াবিদ জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, শীত ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি কমতে পারে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় শৈতপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
তিনি আরও জানান, দিনে গরমের কারণে অনেকে এখনও পাতলা পোশাকেই স্বস্তি পান। তবে রাত নামতেই ঘরে ঘরে সোয়েটার, চাদর, কম্বল বেরিয়ে আসছে। শীতজনিত রোগের আশঙ্কায় অনেকে সতর্ক হতে শুরু করেছেন। শীতের এই দোলাচলে পঞ্চগড়বাসী প্রস্তুতি নিচ্ছে আগাম শীত মোকাবেলার।
উত্তরের জেলায় মৌসুমের এমন বৈচিত্র্যময় রূপ যেন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে—ডিসেম্বর আসতেই শীত আরও প্রবলভাবে কড়া নাড়বে মানুষের দরজায়।
এসি//