কিংবদন্তি গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ
আজ ১৩ নভেম্বর, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ১৯৪৮ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিংবদন্তি গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ—যিনি বাংলা সাহিত্যের এক অমর নক্ষত্র। কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা—প্রতিটি শাখায় তিনি নিজের ছাপ রেখে গেছেন। আজ তাঁর ৭৭তম জন্মবার্ষিকী।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই ক্যানসারের কাছে হার মানা এই সাহিত্যের জাদুকর ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড় সন্তান হুমায়ূন। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য এবং সৃষ্টিশীলতার প্রতি তাঁর অনুরাগ স্পষ্ট ছিল।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ও শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর পথপ্রদর্শক তিনি, একই সঙ্গে আধুনিক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। তাঁর চরিত্র ও গল্পগুলি আজও পাঠক হৃদয়ে জীবন্ত। মোহময় গদ্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনধারা উপস্থাপন করার কৌশল তাঁকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন, পরে নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিমার রসায়ন শাস্ত্রে শিক্ষালাভ করেন। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে দীর্ঘ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন, পরবর্তীকালে লেখালেখি ও চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে অধ্যাপনা ছেড়ে দেন।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’, ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘শঙ্খনীল কারাগার’। এই দুটি উপন্যাস সাহিত্য মহলে তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়। এরপর প্রায় ৫০ বছরের লেখকজীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যে এক অমর অবস্থান তৈরি করেন। গল্প বলার ভঙ্গি ও নিখুঁত চরিত্রচিত্রণ তাঁকে ‘গল্পের জাদুকর’ উপাধিতে ভূষিত করেছে।

দুই শতাধিক উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘দেয়াল’, ‘বাদশাহ নামদার’, ‘কবি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘লীলাবতী’, ‘গৌরীপুর জংশন’, ‘নৃপতি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নক্ষত্রের রাত’। তাঁর সৃষ্টি করা ‘হিমু’ ও ‘মিসির আলী’ চরিত্র আজও পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।
গল্প, উপন্যাস ছাড়াও হুমায়ূন নির্মিত নাটক ও চলচ্চিত্র ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। উল্লেখযোগ্য: ‘আজ রবিবার’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ আরও অগণিত সম্মান। চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও তিনি একাধিকবার জিতেছেন।

আজ জন্মবার্ষিকীতে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্বলন, সকালের মধ্যে কেক কেটে এবং লেখকের কবর জিয়ারত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছেলে নিশাত ও নিনিত, নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং লেখকের ভক্তরা।
হুমায়ূন আহমেদ চলে গেলেও তাঁর সাহিত্য, চরিত্র, এবং গল্পের জাদু বাংলা পাঠক হৃদয়ে চিরন্তনভাবে বেঁচে থাকবে।
এসি//