ট্রাম্পের ঘুম হারাম করে দেয়া কে এই মামদানি
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহর নিউইয়র্কে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন জোহরান মামদানি। দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এই মুসলিম তরুণ রাজনীতিক এখন শহরটির প্রথম মুসলিম মেয়র। অল্প সময়ের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক প্রাণবন্ত প্রচারণা ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তিনি নিউইয়র্কের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছেন।
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জন্ম নেওয়া মামদানি মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্স থেকে মাধ্যমিক শেষ করে তিনি বোউডয়িন কলেজে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনেই তাঁর রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে; সেই সময় তিনি ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ সংগঠনের ক্যাম্পাস শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।

২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তিনি যোগ দেন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, বাড়িভাড়া, গণপরিবহন ও শিক্ষাব্যবস্থার মতো বাস্তব ইস্যু নিয়ে সরাসরি কাজ করে দ্রুতই তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
২০২৪ সালে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন মামদানি। তখনও তিনি তুলনামূলকভাবে নতুন মুখ হলেও, মাত্র এক বছরের মধ্যেই শহরের সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রচারণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বহুসাংস্কৃতিক বার্তা — উর্দু, স্প্যানিশসহ নানা ভাষায় প্রচার চালিয়ে তিনি নিউইয়র্কের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠেন।
নাগরিক জীবনের ব্যয় কমানো এবং সামাজিক ন্যায়ের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মামদানি সাশ্রয়ী বাসস্থান, বিনামূল্যে গণপরিবহন, এবং পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের জন্য সর্বজনীন শিশুসেবা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর সমর্থকদের বিশ্বাস, জোহরান মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক হবে আরও ন্যায়ভিত্তিক, সমতাপূর্ণ ও সাশ্রয়ী একটি শহর — যেখানে নেতৃত্ব আসবে সাধারণ মানুষের হাত থেকেই।

মামদানির এই ঐতিহাসিক জয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, পুরো যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতিতেই সাড়া ফেলেছে। তার বিজয়কে অনেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রগতিশীল শাখার জন্য বড় একটি সাফল্য হিসেবে দেখছেন এমন সময়ে, যখন জাতীয় পর্যায়ে ডেমোক্র্যাটরা এখনও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল নিয়ে বিভক্ত।
স্থানীয় নিউইয়র্কবাসী ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও মামদানিকে নিয়ে তীব্র মন্তব্য করেছেন। তিনি মামদানিকে মিথ্যাভাবে “কমিউনিস্ট” বলে আখ্যা দিয়ে দাবি করেন, “এই ব্যক্তি নির্বাচিত হলে শহরটা দখল হয়ে যাবে।” কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর স্পষ্ট হয়ে গেছে, সেই শহর এখন নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে, যেখানে ট্রাম্পের কথার কোনো প্রভাব পড়েনি— বরং মামদানির জয়ে যেন ট্রাম্পের ঘুমই হারাম হয়ে গেছে।
এসি//