আন্তর্জাতিক

ক্ষুধা-তৃষ্ণায় নিঃশেষ গাজা, যুদ্ধবিরতিও আনেনি স্বস্তি

ইসরাইলের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজা উপত্যকায় খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পৌঁছানো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, তারা বর্তমানে ‘সময়ের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা’ করছে, কারণ বোমা বিধ্বস্ত এই ছিটমহলে সরবরাহ কার্যক্রম গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

 মঙ্গলবার (০৪ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)–এর মুখপাত্র আবির এতেফা জানান, যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখনো মাত্র দুটি প্রবেশপথ খোলা রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।

 তিনি বলেন, ‘আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার প্রয়োজন। দ্রুত সহায়তা পৌঁছে দিতে আমাদের সব ধরনের সুযোগ দরকার। আমরা সময়ের বিরুদ্ধে লড়ছি—শীত আসছে, মানুষ এখনো ক্ষুধার্ত, আর তাদের চাহিদা বিপুল।’

তিনি আরও বলেন, ব্যাপক পরিমাণে সরবরাহের জন্য, ডাব্লিউএফপির সমস্ত ক্রসিং খোলা থাকা প্রয়োজন, বিশেষ করে উত্তরে। খাদ্য দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে যেখানে প্রয়োজন সেখানে পরিবহনের অনুমতি দেয়ার জন্য গাজা জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 ডব্লিউএফপি বর্তমানে গাজায় ৪৪টি খাদ্য বিতরণকেন্দ্র পরিচালনা করছে। অক্টোবরের ১০ তারিখ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির পর থেকে এক মিলিয়নের বেশি ফিলিস্তিনিকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়। তবে গাজার উত্তরাঞ্চলে পৌঁছানো এখনো কঠিন। আগস্টে সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার পরও উত্তরাঞ্চলের প্রবেশপথ বন্ধ থাকায় ত্রাণ কাফেলাগুলোকে দক্ষিণ দিক দিয়ে ধীর ও জটিল পথে যেতে হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরাইলি সেনারা কিছুটা পিছু হটায় অনেকে উত্তর গাজায় ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু ফিরে গিয়ে তারা দেখতে পাচ্ছেন—বাড়িঘর, পাড়া-মহল্লা সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেক পরিবার এখনো তাঁবু বা কাঁচা ঘরে আশ্রয় নিচ্ছে।

গাজা সিটির বাসিন্দা খালেদ আল-দাহদুহ জানান, তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। শীতের প্রস্তুতি হিসেবে ইট-কাদামাটি দিয়ে নিজেই ছোট্ট আশ্রয় বানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে তাঁবু নেই, তাই কাদা দিয়ে একটা ছোট্ট ঘর তুলেছি। এটা ঠান্ডা, পোকামাকড় আর বৃষ্টি থেকে অন্তত কিছুটা রক্ষা দেয়।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে মোট ৩,২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে—গড়ে প্রতিদিন ১৪৫টি, যা যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যার মাত্র ২৪ শতাংশ।

এদিকে, যুদ্ধবিরতি চললেও ইসরাইলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরাইলি কোয়াডকপ্টারের গুলিতে একজন নিহত ও একজন আহত হন। একই দিনে জাবালিয়া এলাকায় ইসরাইলি সেনার গুলিতে আরও একজনের মৃত্যু হয়।

প্রসঙ্গত, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬০৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন