চুলে রঙে লুকিয়ে কিডনি বিকলের আশঙ্কা
চুল পেকে গেলে বা একটু নতুন লুকে নিজেকে সাজাতে চুলে রং দেন অনেকে। কিন্তু সেই রঙিন আনন্দের আড়ালেই লুকিয়ে থাকতে পারে ভয়ানক বিপদ! চিকিৎসকেরা সতর্ক করছেন—ঘন ঘন হেয়ার ডাই ব্যবহার কিডনির ওপর ফেলতে পারে মারাত্মক প্রভাব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একবার কিডনি বিকল হলে তা নিরাময় বা প্রতিস্থাপনের পথ খুবই জটিল। অথচ এই জটিল রোগের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপন, খাবার, এমনকি চুলে ব্যবহার করা প্রসাধনীও।
সম্প্রতি ভারতের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘন ঘন চুলে রং করা এবং অত্যধিক রাসায়নিকযুক্ত ডাই ব্যবহার করলে কিডনি বিকলের ঝুঁকি বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
হেয়ার ডাই থেকে শরীরে কীভাবে ঢোকে বিষ
চুলে রং করার সময় যে রাসায়নিকগুলো মাথার ত্বকে লাগে, সেগুলো অনেকটাই শরীরে শোষিত হয়ে যায়। রক্তে মিশে এই উপাদানগুলো ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে।
আমাদের কিডনি রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে ফেলে শরীর পরিষ্কার রাখে। কিন্তু হেয়ার ডাইয়ের কিছু উপাদান এতটাই শক্তিশালী যে কিডনি সেগুলো ছেঁকে ফেলতে পারে না। ফলে এই বিষাক্ত পদার্থ জমতে থাকে রক্তে, যা একসময় কিডনির পাশাপাশি লিভার ও ফুসফুসেরও ক্ষতি করতে পারে।

কোন কোন রাসায়নিক সবচেয়ে ক্ষতিকর
চুলে রং করার জন্য ব্যবহৃত হেয়ার ডাইয়ে থাকে প্যারা-ফিনাইলিন ডায়ামিন (PPD) — সবচেয়ে ভয়ংকর রাসায়নিকগুলোর একটি। গাঢ় রং তৈরির জন্য এটি ব্যবহার করা হয়, কিন্তু মাথার ত্বকের মাধ্যমে রক্তে ঢুকে কিডনি, লিভার ও ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষতি করে।
এ ছাড়াও অ্যামোনিয়া, অ্যামাইনো ফেনল, প্রপিলিন গ্লাইকল, এবং সিসা ও পারদ-এর মতো ভারী ধাতুও থাকে অনেক ডাইয়ে—যা শরীরে জমে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে কিডনির রোগের ভয়াবহতা
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি জানাচ্ছে—বিশ্বে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন।
এর মধ্যে ১০.৪ শতাংশ পুরুষ এবং ১১.৮ শতাংশ নারী ভুগছেন দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) কিডনি রোগে।
কিডনি শুধু শরীর থেকে দূষিত পদার্থই বের করে না; এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য এবং হরমোন নিঃসরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই কিডনি বিগড়ে গেলে গোটা শরীরের ভারসাম্যই নষ্ট হয়ে যায়।

প্রাকৃতিক উপায়ে রাঙাতে পারেন চুল
চুলে রং করতেই হবে—কিন্তু রাসায়নিক নয়, প্রকৃতির হাত ধরেই আসুক সে রং। চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে চুলে রং করলে একদিকে যেমন কিডনি সুরক্ষিত থাকে, তেমনি চুলও থাকে মজবুত ও ঝলমলে।
হেনা মিশ্রণ:
অরগ্যানিক হেনা পাউডার চায়ের লিকার দিয়ে মিশিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর চুলে লাগিয়ে রাখুন এক ঘণ্টা, তারপর ধুয়ে ফেলুন। চুলে আসবে প্রাকৃতিক বাদামি আভা।

আমলকি মিশ্রণ:
তিন চামচ আমলকি পাউডার, তিন চামচ হেনা ও এক চামচ কফি পাউডার মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানান। চুলে লাগিয়ে দুই ঘণ্টা রেখে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল হবে মজবুত, রংও থাকবে টেকসই।
কারিপাতা তেল:
নারকেল তেলে কারিপাতা ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। এই তেল নিয়মিত মাথায় মালিশ করুন। এটি চুল পাকা রুখতে ও চুলকে উজ্জ্বল রাখতে দারুণ কার্যকর।
চুলে রঙের ছোঁয়া হোক রুচির প্রকাশ, কিন্তু জীবনের উজ্জ্বলতা যেন না হারায় তার নিজস্ব দীপ্তি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিায়া
এসি//