ভূখণ্ড হারানোর পথে ফিলিস্তিনি, বিল পাস ইসরাইল পার্লামেন্টে
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ইসরাইলি পার্লামেন্ট ‘নেসেট’ এই সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিলটি সম্পূর্ণভাবে পাস হলে পশ্চিম তীর ইসরাইলের মানচিত্রে সংযুক্ত হবে এবং সেখানে ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব কার্যকর হবে। অর্থাৎ, কার্যত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের বৈধতা পাবে ইসরাইল।এটি কার্যত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্তিরই সমান এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
দখলদার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য নিজেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ১২০ আসনের নেসেটে ২৫-২৪ ভোটে বিলটি প্রাথমিকভাবে পাস হয়। এটি আইন হিসেবে কার্যকর হতে আরও তিন ধাপের ভোটে অনুমোদন পেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার দল লিকুদ পার্টি বিলটির বিরোধিতা করলেও কয়েকজন জোটসঙ্গী এবং বিরোধী এমপি এতে সমর্থন দেন।
নেসেটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব জুদিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে (পশ্চিম তীর) প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে বিলটি আনা হয়েছে। এখন এটি আরও আলোচনার জন্য সংসদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে পাঠানো হবে।
অথচ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মাস আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে ইসরাইলকে পশ্চিম তীর সংযুক্তির অনুমতি দেওয়া হবে না। একই সময়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও এই সময়টাতে ইসরাইল সফর করছেন।
এদিকে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি এক বিবৃতিতে এই ভোটকে ‘বিরোধী দলের উসকানি’ উল্লেখ করে বলেছে, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। আসল সার্বভৌমত্ব আইন দেখানোর ভান করে নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমেই অর্জন করা যায়।
মূলত, পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে তা ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে কার্যত শেষ করে দেবে।
অন্যদিকে এই বিল পাসে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হামাস, কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডান। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা নেসেটের ফিলিস্তিনি ভূমি সংযুক্তির প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা, এই অঞ্চলগুলো একক ভৌগোলিক ইউনিট, যার ওপর ইসরাইলের কোনো সার্বভৌম অধিকার নেই।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, এই বিলগুলো দখলদার ইসরাইলের উপনিবেশবাদী চেহারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। পশ্চিম তীর দখলের এই প্রচেষ্টা অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য। কাতার এই বিলকে ‘ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর সব ধরনের বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে রিয়াদ। আর জর্ডান বলেছে, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে বাধা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ।
বর্তমানে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ৭ লাখের বেশি ইসরাইলি জোরপূর্বক বসতি গড়ে বাস করছে। আন্তর্জাতিক আইনে এসব বসতি ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
এসি//