দেশজুড়ে

বুড়ির বাঁধে চলছে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব

ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়ির বাঁধে চলছে  ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব। প্রতি বছরের মতো এবারও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুক নদীর বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসবে মেতেছেন হাজারো মানুষ।

গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর)  সন্ধ্যায় বাঁধের গেট ছাড়ার পর রাত ৮টা থেকে মাছ ধরতে নামেন তারা। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সারা দিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত রাত পর্যন্ত চলবে মাছ ধরার উৎসব।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ ।

সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি থেকে আসা মনোয়ার হোসেন ও আফজাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিবারই এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ  মাছ ধরতে আসেন। সবাই মিলে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মেলায় পরিণত হয়েছে।

বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রাম থেকে আসা রথিন্দ্র ও যতি মোহন বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে জাল দিয়ে মাছ মারছি। গতবার অনেক মাছ পেয়েছিলাম। এবারে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। রিং জাল ব্যবহারের কারণে এবার মাছ কমেছে গেছে। আর মাছ কম পাওয়ায় মৎস্যজীবী, জেলে ও মৎস্যপ্রেমিরা হতাশা প্রকাশ করছেন।

মাছ ধরতে আসা স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোরে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবার আমি আসি। আজ  এসে সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুঁটি, ষোল, শিংসহ প্রায় তিন কেজি দেশি মাছ পেয়েছি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাফিউল বারী বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ির বাঁধ সেচ প্রকল্পটি  নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতিবছর বাঁধের  গেট ছাড়ার পর এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। সবাই মিলে মাছ ধরেন। এর মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়েছে। কেউ যাতে অভয়াশ্রমে মাছ না ধরে সে বিষয়ে তৎপর আছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাছ ধরছেন। এই উৎসব ধরে রাখতে প্রতি বছর এই বুড়ির বাঁধ বিলের এলাকায় মাছ ছাড়ে জেলা মৎস অধিদপ্তর

তবে  বিগত ২/৩ বছর ধরে কাঙ্খিত মাছ না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জেলার জেলে,  ও মৎস্যপ্রেমিরা। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অবহেলা ও ভালো দেখা শোনা না করার কারণে মাছে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, মাছ ধরার উৎসবটি ঐতিহ্যবাহী ও সার্বজনীন। এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ অংশ নেন। আর বাঁধের মাছ চাষে  অবহেলা ও দায়িত্ব হীনতা নয়, তবে কিছুটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। একই স্থানে একাধিক দেখাশোনার পরিষদের ও মানুষের কারণে কিছু টা সমস্যা হয়। তবে এ সমস্যার সমাধান করে এই বুড়ির বাঁধে আবার দেশী জাতের মাছের চাষ ও অভয়াশ্রম করার মাধ্যমে সকলের সহযোগিতায় বুড়ির বাঁধের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে

 

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন