গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর, সরে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা
দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অবশেষে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গাজার কিছু অংশ থেকে সরে যেতে শুরু করেছে ইসরাইলি সেনারা। তবে যুদ্ধ সত্যিই শেষ হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে গাজাবাসীর মনে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। খবর রয়টার্স।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনুস ও মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি সেনাদের সরতে দেখা গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু একই সময়ে ট্যাঙ্ক গোলাবর্ষণ ও গুলির শব্দও শোনা গেছে।
গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল যায়েদা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার বাড়ি এখনো দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আশপাশে কিছুই নেই। শুনছি যুদ্ধ শেষ, কিন্তু কেউ এসে স্পষ্ট করে বলছে না—আমরা এখন ভয় পাওয়া বন্ধ করতে পারি কি না?’
যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল শর্তগুলো হলো- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় সব শত্রুতামূলক কার্যক্রম স্থগিত; ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলেআটক বন্দিদের মুক্তি; বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং ইসরাইলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তিকে যুদ্ধ সমাপ্তির দিকে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ‘সরকার জীবিত ও মৃত—সব বন্দির মুক্তির কাঠামো অনুমোদন করেছে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজার উপকূলীয় সড়ক থেকে ইসরাইলি বাহিনী সরে গেলে শত শত মানুষ নিজ শহরে ফেরার চেষ্টা করে। কিন্তু কাছাকাছি গোলাগুলির কারণে অনেকেই থেমে যায়। উদ্ধারকর্মীরা নতুন করে ধ্বংসস্তূপে প্রবেশ করে অন্তত ১০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন।
হামাসের নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হাইয়া জানিয়েছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে নিশ্চিত আশ্বাস পেয়েছি—যুদ্ধ শেষ।’
বর্তমানে ২০ জন ইসরাইলি বন্দি জীবিত, ২৬ জন নিহত বলে ঘোষণা করেছে হামাস।
চুক্তি কার্যকর হলে শত শত খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে, যাতে হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষকে সহায়তা করা যায়।
তবে এখনো কিছু বাধা রয়ে গেছে। কোন কোন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে, সেই তালিকা এখনো প্রকাশিত হয়নি। হামাস দাবি করছে, ইসরাইলে আটক বিখ্যাত কিছু ফিলিস্তিনি নেতাসহ শত শত বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।
ট্রাম্পের ‘২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা’-এর পরবর্তী ধাপ এখনো চূড়ান্ত নয়—বিশেষ করে গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা ও হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে মতভেদ রয়ে গেছে। চুক্তিটি আরব ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন পেয়েছে এবং এটি ট্রাম্পের বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার স্থিতিশীলতার জন্য একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে, যাতে থাকবে মিশর, কাতার, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন সেনাদের ২০০ সদস্য। তবে কোনো মার্কিন সেনা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবস্থান করবে না।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের ১,২০০ জন ইসরাইলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। এরপর ইসরাইলের পাল্টা অভিযানে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
এমএ//