ইরান কখনোই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না: পেজেশকিয়ান
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন—তেহরান কোনো দিনই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কড়া হুঁশিয়ারির একদিন পর বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, তেহরান অতীতে কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেনি, বর্তমানে করছে না এবং ভবিষ্যতেও করবে না। এটি ইরানের ধর্মীয় নীতি এবং সর্বোচ্চ নেতার স্পষ্ট সিদ্ধান্ত বলেও উল্লেখ করেন পেজেশকিয়ান।
তিনি জোরালোভাবে বলেন, ‘আমি এই অধিবেশনে আবারও ঘোষণা করছি যে, ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেনি, করছে না এবং ভবিষ্যতেও করবে না। আমরা পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে নেই এবং এটি আমাদের নৈতিক বিশ্বাস এবং নেতার ধর্মীয় নির্দেশের বিষয়। ফলে আমরা কখনো প্রচণ্ড ধ্বংসাত্মক অস্ত্রনীতি অনুসরণ করব না।’
গত জুন মাসের ১২ দিনের সংঘাতের প্রসঙ্গ তুলে ধরে পেজেশকিয়ান বলেন, ইরানের সাহসী জনগণ আগ্রাসীদের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা উন্মোচন করে ভেঙে দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, মানসিক ও মিডিয়ার যুদ্ধ, বিভাজনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জাতীয় ঐক্য অক্ষুণ্ণ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ইরান বহু বছর ধরেই বলে আসছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মীয় ফরমানও দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক বোমা তৈরি ইসলামি নীতির বিরোধী। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি যে ইরান চূড়ান্তভাবে অস্ত্র তৈরির পথে গেছে।
তবুও সন্দেহ থামেনি ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের। তাদের আশঙ্কা, ইরানের কাছে উন্নত পারমাণবিক প্রযুক্তি রয়েছে। তাই চাইলে তারা দ্রুত অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হতে পারে। এই সন্দেহ থেকেই তেহরানের ওপর আবারও নানা বিধিনিষেধ আরোপের পায়তারা চলছে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রস্তাব পাস হয়। যদি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি না হয়, তাহলে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ইরানের ওপর ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল হবে যা ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির আওতায় প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
এই নিষেধাজ্ঞা এড়াতে গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ইথ্রি বলে পরিচিত ইউরোপের তিন দেশ জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাসের সঙ্গে বৈঠক করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। বৈঠক হয় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির সঙ্গেও।
এসব বৈঠকে ইউরোপীয় কূটনীতিকরা ইরানকে বলেছেন, যদি তেহরান এখনও স্ন্যাপব্যাক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চায়, তাহলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নিতে হবে। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ইথ্রি-এর দৃষ্টিতে, এই ‘কার্যকর পদক্ষেপে’র মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ফের সরাসরি আলোচনা শুরু করা এবং আইএইএ-এর জন্য সমস্ত ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশাধিকার দেয়া।
তবে বলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যু্ক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে না তেহরান। গত মঙ্গলবার এক ভাষণে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো আলোচনা সম্পূর্ণ অর্থহীন। তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে সমাধান স্বীকার করা শুধুই আরও চাপ ও অনন্ত দাবির পথ উন্মুক্ত করে।
এসি//