কাতারে হামাস নেতাদের হত্যায় মোসাদের আপত্তি!
কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের ওপর স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তাবে রাজি হয়নি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ- এমন তথ্য জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোসাদ মনে করেছিল এ ধরনের অভিযান চলমান জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে ভেস্তে দিতে পারে। এতে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দোহার ভূমিকা দুর্বল হয়ে পড়বে।
মোসাদের আপত্তির পর ইসরায়েল শিন বেতকে দিয়ে বিমান হামলার পরিকল্পনা করে। তবে সেই হামলায় মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি। পাঁচ হামাস প্রতিনিধি নিহত হলেও হামাসের শীর্ষ নেতারা অক্ষত থাকেন।
ঘটনাটি ইসরায়েলের সামরিক ও নীতিগত স্তরে তীব্র বিতর্ক উত্থাপন করেছে। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বেশিরভাগ শীর্ষ কর্মকর্তাই আক্রমণ পেছানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন, কারণ তখন আলোচনার টেবিলে জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাব ছিল এবং কাউকে জিম্মির বিপদে ফেলতে পারে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না বলে তারা মনে করতেন।
আইডিএফ প্রধান, মোসাদের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মধ্যে এ ধরনের আপত্তি ছিল। এই অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ কর্মকর্তাই হামলাটি পিছিয়ে দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এরপরেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কয়েকজন কট্টরমন্ত্রী তৎপর আক্রমণের পক্ষে ছিলেন। কৌশলগতভাবে মোসাদের অনিচ্ছার প্রধান কারণ ছিল কাতারকে জরুরি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রাখা। দোহায় সরাসরি অভিযান করলে কাতারের ওপর রাজনৈতিক চাপ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বড় বিপর্যয় ঘটতে পারত।
মোসাদ মনে করেছিল ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময় ও অবস্থায় স্থল অভিযানের মাধ্যমে লক্ষ্যভাগে আরও নিশ্চিতভাবে আঘাত করা যাবে, তাই তখনই ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। এছাড়া তারা কূটনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি আলোচনার ফলাফল নষ্ট হওয়ার ভয়েও সতর্ক ছিল।
অন্যদিকে আক্রমণের ধরন ও বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শিন বেতের সহযোগিতায় বিমান বাহিনী দোহায় হামলা পরিচালনা করে বলে জানানো হলেও, প্রাথমিক গুঞ্জনে বলা হয়েছিল হামাসের অন্যতম নেতা খলিল আল-হায়া নিহত হয়েছেন, কিন্তু পরে হামাস জানায়, তিনি বেঁচে আছেন কিন্তু তার সন্তান নিহত হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রমণ দ্রুত ও এমনভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়, যাতে ইসরায়েলের বিমান সৌদি আকাশসীমা ব্যবহার না করে এবং যুক্তরাষ্ট্র জানার আগেই কাজ শেষ হয়ে যায়।
নেতানিয়াহু হামলার যে সময় নির্ধারণ করেন, তাতে মোসাদের ভিন্নমত বিষয়ে অবগত আরেক ইসরায়েলি বলেন, ‘আমরা তাদেরকে এখন থেকে এক, দুই বা চার বছর পরেও মারতে পারতাম, মোসাদ জানে কীভাবে করতে হবে। কিন্তু এখন কেন?’
দোহায় হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের চিফ অব স্টাফ এয়াল জামির, মোসাদপ্রধান দাভিদ বারনেয়া ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাখি হানেগবি আপত্তি জানিয়েছিলেন বলে চ্যানেল টুয়েলভের খবরে বলা হয়েছে।
এই ঘটনার ফলাফল কেবল সামরিক সফলতা বা ব্যর্থতায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি কূটনীতি, গোয়েন্দা নীতি ও সংকটকালীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর বড় প্রশ্ন তুলেছে। যদি মোসাদ স্থল অভিযান চালিয়ে থাকত, তাহলে কাতারের সাথে সম্পর্ক ও আলোচনা প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা ছিল।
অন্যদিকে স্থল-অপারেশন না করায় বিমান হামলা করতেই হল, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট ও বিতর্কিত ফল এনে দিয়েছে। এতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা বিভাগগুলোর ভূমিকা, দায়িত্ববিভাজন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, এনডিটিভি
এসি//