সারাদিন মোজা পরে থাকা, অভ্যাস নাকি বিপদ
মোজা আমাদের পোশাকের সাধারণ একটি অংশ। কিন্তু তার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। অনেকেই অফিস, বাইরে ঘোরাফেরা বা এমনকি ঘুমানোর সময়ও মোজা পরে থাকতে অভ্যস্ত। তবে প্রশ্ন হচ্ছে সারাদিন মোজা পরে থাকা আসলেই কতটা উপকারী আর কতটা ক্ষতিকর? বিশেষজ্ঞদের মতে এর সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অজান্তেই কিছু গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
মোজা পরার উপকারিতা
পা উষ্ণ রাখা
শীতকালে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে শরীর অস্বস্তি পায়। মোজা শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখে।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা
আরামদায়ক মোজা ঠাণ্ডায় রক্ত চলাচল সচল রাখে বিশেষ করে যাদের হাত-পা সবসময় ঠাণ্ডা থাকে।
সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা
মোজা পা-কে ধুলোবালি, ব্যাকটেরিয়া, ছোট আঘাত ও ফোসকা থেকে রক্ষা করে।
ভালো ঘুমে সহায়ক
সুইজারল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিষ্কার কটন মোজা পরে ঘুমালে শরীরের তাপমাত্রা সুষম থাকে, দ্রুত ঘুম আসে।
ফ্যাশন ও আত্মবিশ্বাস
ফরমাল ড্রেসের সঙ্গে মোজা না পরা অনেকের কাছে অসম্পূর্ণ মনে হয়। সঠিক মোজা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
খেলোয়াড়দের জন্য প্রয়োজনীয়
মোজা পায়ের চাপ কমায়, ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে এবং খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে সহায়তা করে।
সারাদিন মোজা পরে থাকার ক্ষতি
অতিরিক্ত ঘাম
পায়ে প্রতিদিন গড়ে ২ লক্ষ ঘর্মগ্রন্থি কাজ করে যা ২০০–২৫০ মিলিলিটার ঘাম উৎপাদন করে। সারাদিন মোজা পরে থাকলে আর্দ্রতা জমে যায়।
দুর্গন্ধ
ঘাম ও আর্দ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া জমে গিয়ে দুর্গন্ধ তৈরি করে।
ফাঙ্গাল সংক্রমণ (Athlete’s Foot)
আর্দ্র পরিবেশে ছত্রাক জন্মে চুলকানি, লালচে ভাব ও ফোসকা তৈরি করে।
নখের সমস্যা
ভেজা বা টাইট মোজা নখের ফাঙ্গাস বাড়ায়।
রক্ত চলাচলে সমস্যা
টাইট মোজা রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, ডায়াবেটিস ও ভেরিকোজ ভেইন রোগীদের জন্য বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ।
ত্বকের ক্ষতি
বাতাস না পেলে ত্বক দুর্বল হয়, ফলে সহজেই আঘাত বা ঘা হয়।
অ্যালার্জি ও একজিমা
নিম্নমানের সিনথেটিক মোজা ত্বকে অ্যালার্জি, র্যাশ ও একজিমা তৈরি করতে পারে।
ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়া
একই মোজা বারবার ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষ কিছু স্বাস্থ্যগত বিষয়
• ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: টাইট মোজা না পরে ঢিলা কটন মোজা পরা উচিত, যাতে রক্ত চলাচল ব্যাহত না হয়।
• শিশুদের ক্ষেত্রে: সারাদিন মোজা পরে থাকলে তাদের কোমল ত্বকে ঘা ও র্যাশ হতে পারে।
• বয়স্কদের জন্য: বয়স বাড়লে ত্বক পাতলা হয়, তাই আর্দ্রতা জমে সংক্রমণ দ্রুত হয়।
• খেলোয়াড়রা: বিশেষ ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে এমন মোজা ব্যবহার করতে হবে, নইলে পায়ে ফোসকা ও সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
সঠিক অভ্যাস যা হওয়া উচিত
• কটন বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে এমন মোজা ব্যবহার করুন।
• প্রতিদিন মোজা পরিবর্তন করুন, ভেজা মোজা কোনও অবস্থায় ব্যবহার করবেন না।
• বাসায় এসে পা ধুয়ে শুকিয়ে তারপর নতুন মোজা পরুন।
• রাতে ঘুমের সময় মোজা খোলা রাখাই ভালো; তবে শীতে পরিষ্কার কটন মোজা ব্যবহার করা যেতে পারে।
• সপ্তাহে অন্তত একদিন খালি পায়ে হাঁটুন, এতে পায়ের ত্বক বায়ু পাবে।
• ব্যায়ামের পর সঙ্গে সঙ্গে মোজা পরিবর্তন করুন।
• মোজা ধোয়ার সময় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন।
ডার্মাটোলজিস্টরা বলেন, সারাদিন মোজা পরে থাকা যাবে তবে পরিষ্কার ও বাতাস চলাচল করে এমন মোজা ব্যবহার করতে হবে। পডিয়াট্রিস্টরা সতর্ক করেছেন, টাইট ও ভেজা মোজা দীর্ঘসময় পরলে পায়ের রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঘুম বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাতে ঘুমের সময় মোজা পরে থাকা উপকারী হতে পারে তবে সেটি পরিষ্কার ও নরম হতে হবে।
এসকে//