টনসিল ফোলা : কারণ, লক্ষণ ও সমাধান
হঠাৎ গলায় ব্যথা, ফোলা অংশ কিংবা কাশি দেখা দিলে অনেকেই টনসিল ফোলার শিকার হন। এটি শিশু থেকে শুরু করে বয়স্কদের মধ্যেও দেখা যায়। সময়মতো যত্ন না নিলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় জটিলতা তৈরি করতে পারে।
গলার পেছনে থাকা লিম্ফয়েড টিস্যুই হলো টনসিল। শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষার জন্য এটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর সংক্রমণ ঠেকাতেও টনসিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
টনসিল ফোলার কারণ
• ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণ: বিশেষত স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়া।
• ভাইরাস সংক্রমণ: সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনোভাইরাস ইত্যাদি।
• অ্যালার্জি ও পরিবেশ: ধূলা, ধোঁয়া বা অন্যান্য অ্যালার্জেন।
• দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা: ক্রনিক সাইনাস, ধূমপান বা দূষিত পরিবেশ।
লক্ষণ
১. গলায় ব্যথা ও অস্বস্তি
২. গলার ভেতরে লাল বা ফোলা অংশ
৩. সাদা বা হলুদ দাগ (পুঁজ)
৪. খেতে বা পান করতে অসুবিধা
৫. কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা
৬. শ্বাসকষ্ট বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
৭. শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুমের সময় শব্দ হওয়া বা হ্যাঁফানো
চিকিৎসা ও প্রতিকার
• চিকিৎসকের পরামর্শ: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।
• গার্গল ও ভাপ নেওয়া: গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল ব্যথা ও ফোলা কমায়।
• ঔষধ ব্যবহার: ব্যথানাশক ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধে উপশম মেলে।
• বিশ্রাম ও পানি পান: পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও হালকা খাবার দ্রুত আরোগ্যে সহায়ক।
• সার্জারি: দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় টনসিলেকটমি (অস্ত্রোপচার) প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধ
• নিয়মিত হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
• ধূমপান, অ্যালকোহল ও দূষণ থেকে দূরে থাকা
• শিশুদের ক্ষেত্রে স্কুলে সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতন থাকা
• সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত পানি পান
ঝুঁকি ও জটিলতা
সময়ে চিকিৎসা না নিলে-
• বারবার টনসিল ফোলা বা সংক্রমণ হতে পারে
• দীর্ঘমেয়াদি গলার সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে
• বিরল ক্ষেত্রে সংক্রমণ রক্ত বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়াতে পারে
গবেষণায় বলা হয়েছে, দ্রুত চিকিৎসা নিলে স্ট্রেপটোকক্কাস সংক্রমণ থেকে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। টনসিল ফোলা সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করলে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
টনসিল ফোলা সাময়িক অস্বস্তি তৈরি করলেও সঠিক যত্ন ও চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই এর প্রধান সমাধান।
এসকে//