লাইফস্টাইল

স্বাভাবিক নাকি সতর্কতার সংকেত বুক ধড়ফড়

বুক ধড়ফড় বা ডাক্তারি ভাষায় Palpitations হলো হঠাৎ বা অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের অনুভূতি। অনেকেই অনুভব করেন “বুক ধড়ফড় করছে” বা “হঠাৎ গতি বেড়ে গেছে”। সাধারণত এটি স্বাভাবিক বা ক্ষণস্থায়ী হয় কিন্তু কখনও কখনও গুরুতর হৃদরোগের ইঙ্গিতও হতে পারে।

কারণ :

স্বাভাবিক ও নিরীহ কারণ

• মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: আতঙ্ক, উদ্বেগ বা চাপ হৃৎস্পন্দন বাড়াতে পারে।

• শারীরিক কর্মকাণ্ড: হঠাৎ উঠে দাঁড়ানো, ভারী কাজ, ব্যায়াম বা দৌড়।

• ক্যাফেইন ও এনার্জি ড্রিঙ্ক: অতিরিক্ত চা, কফি বা এনার্জি ড্রিঙ্ক হৃৎস্পন্দন দ্রুত করতে পারে।

• অ্যালকোহল ও ধূমপান: হার্টের ছন্দে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

• হরমোন পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা, থাইরয়েড সমস্যা, মেনোপজ বা মাসিক চক্র।

চিকিৎসাগত বা গুরুতর কারণ

• অ্যারিথমিয়া (Arrhythmia): হার্টের ছন্দে অনিয়ম, যেমন Atrial fibrillation বা Ventricular tachycardial 

• হৃদপিণ্ডের শারীরিক সমস্যা: হার্ট ভলভ ডিজিজ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি বা পূর্ববর্তী হার্ট অ্যাটাক।

• লো ব্লাড প্রেশার বা অ্যানিমিয়া: অক্সিজেন সরবরাহ কম হলে ধড়ফড় অনুভূত হয়।

• ঔষধ ও স্টিমুল্যান্ট: অ্যাস্টিমার ইনহেলার, ডিকংজেস্ট্যান্ট বা কিছু অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট।

• ইলেক্ট্রোলাইট অমিল: সোডিয়াম, পটাশিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হৃৎস্পন্দনে প্রভাব ফেলে।

• হৃদযন্ত্রে প্রদাহ: মায়োকার্ডাইটিস বা পারিকার্ডাইটিসের কারণে ধড়ফড় হতে পারে।

লক্ষণ :

• বুকের ধড়ফড় বা অনিয়মিত স্পন্দন

• হৃৎস্পন্দন হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া

• মাথা ভারি লাগা বা হালকা মাথা ঘোরা

• শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা

• বিরল ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, ক্লান্তি বা স্মৃতিভ্রংশ

সতর্কতা :

• ধড়ফড় ১০–১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে

• বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা দেখা দিলে

• অনিয়মিত বা অত্যন্ত দ্রুত হৃৎস্পন্দন, বিশেষত বয়স্ক বা হৃদরোগীর ক্ষেত্রে

• শিশু, গর্ভবতী মহিলা বা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থ ব্যক্তিতে

প্রতিকার ও চিকিৎসা :

ঘরোয়া ব্যবস্থা 

• স্ট্রেস কমানো, ধ্যান ও যোগব্যায়াম

• পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম

• ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ও ধূমপান সীমিত করা

• গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও হালকা ব্যায়াম

চিকিৎসা :

• ECG, Holter মনিটর বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি

• অ্যারিথমিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টি-অ্যারিথমিক ঔষধ

• ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য ঠিক করা

• ওজন নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা

প্রতিরোধ :

• নিয়মিত হৃদযন্ত্র পরীক্ষা ও ডাক্তারি পরামর্শ

• ঔষধ ও স্টিমুল্যান্ট ব্যবহারে সতর্ক থাকা

• শারীরিক ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা

বুক ধড়ফড় সাধারণত ক্ষণস্থায়ী ও নিরীহ হতে পারে। তবে দীর্ঘস্থায়ী, বারবার বা জটিল লক্ষণ থাকলে তা গুরুতর হৃদরোগের সতর্কতা হিসেবে ধরা উচিত। 

সূত্র :

• মায়ো ক্লিনিক

• ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক 

• আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন 

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন