ইউসিবির বিরুদ্ধে রিটকারীদের জরিমানা করলো আদালত

প্রতারণার মাধ্যমে রিট পিটিশন দাখিল করে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি)-এর চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করায় রিটকারি বশির আহমেদ, এম.এ. সবুর ও রাসেল আজিজের নেতৃত্বে থাকা গ্রুপকে  ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করছেন আদালত। জরিমানাকৃত অর্থের ১২ লাখ টাকা ইউসিবিকে এবং ৩ লাখ টাকা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও মার্শাল অফিসে জমা দিতে হবে।

 ইউসিবির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠজনদের নেতৃত্বে  থাকা ইউসিবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি দুদকের মামলায় এই গ্রুপটির ২৩ জনের বিরুদ্ধে শেয়ার জব্দ দাবি করে আদালত নির্দেশও জারী করেন।

এরপর এই গ্রুপটিরই একাংশ চলতি বছরের জুলাইয়ে ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারহোল্ডার এবং কোম্পানিজ অ্যাক্ট, ১৯৯৪-এর ২৩৩ ধারার অধীনে পিটিশন দাখিল করে। তারা পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্ডার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। এতে স্বাক্ষর করেন বশির আহমেদ, এম এ সবুর, শওকত আজিজ রাসেল, আহমেদ আরিফ বিল্লাহ, সুজন চন্দ্র নাথ ও বজল আহেমদ বাবলু।

রিটকারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথমে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চ এজিএম স্থগিত করে আদেশ দেন। তবে, আপিল বিভাগের চেম্বার জজ পরে এজিএম অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি দেন।

ইউসিবির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান আদালতকে জানান, কয়েকজন পিটিশনকারী দেশেই ছিলেন না, অথচ তারা হলফনামা জমা দিয়েছেন যেন তারা আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। এতে শপথ কমিশনার এবং আদালতকে প্রতারিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ন্যূনতম শেয়ারহোল্ডিংয়ের যোগ্যতা দেখানো হয়েছে, যা ব্যাংকের সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।

বর্তমানে ইউসিবি চলমান সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আমানতকারীদের আস্থা পুনঃস্থাপন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ কারণে এ বছরের প্রথম আট মাসেই ৯,৫০০ কোটি টাকারও বেশি নেট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি এবং ৪ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি নতুন একাউন্ট খোলা হয়েছে, যা একটি রেকর্ড।

এ আইনজীবী জানান, আদালত শুনানি শেষে র পিটিশনকারীদের একই বিষয়ে নতুন মামলা দায়েরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন এবং মোট ১৫ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত,  রায়ের ফলে বশির আহমেদ ও তার সহযোগীদের শুধু মোটা অঙ্কের জরিমানাই বহন করতে হবে না, বরং তাদের সুনামও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ব্যাংকিং খাতে একটি শক্ত বার্তা – যে কোনো ধরনের সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা এখন আদালতের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে এবং দায়ীদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আই/এ