মেয়ে হয়ে জিম, সুফল না বিপদ !
জিমে গিয়ে শারীরিকভাবে আরও ফিট হতে চাওয়ার কথা ভাবলে অনেকেই এক নতুন দিগন্তের কথা চিন্তা করেন, কিন্তু কখনও কখনও এই যাত্রা বিপদের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিছু মেয়ে শুরুতে মনে করেছিলেন, শক্তিশালী ও স্লিম হওয়ার পথে তারা একটি নতুন জয় অর্জন করবেন তবে কিছু সময় পরে তারা বুঝতে পারলেন, এটি একেবারে তেমন সহজ পথ নয়।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, মেয়েদের জন্য জিমে ভারী ব্যায়াম বা স্ট্রেনথ ট্রেনিং করতে গিয়ে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেগুলি অনেক সময় অগোচরে থেকে যায়। বিশেষ করে অতিরিক্ত পেশী তৈরির চেষ্টা বা ভুলভাবে ভারী ট্রেনিং করলে শরীরের বিভিন্ন অংশে চাপ পড়তে পারে। এর মধ্যে মাইক্রো স্ট্রেস ফ্র্যাকচার, শরীরের ভারসাম্যহীনতা, পেশী ও জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ এবং হরমোনাল ইস্যু অন্যতম।
প্রধান শারীরিক সমস্যাগুলো-
হরমোনাল ইস্যু
মেয়েদের মাসিক চক্রের সঙ্গে শরীরের অন্যান্য সিস্টেমের সম্পর্ক অনেক গভীর। অতিরিক্ত ট্রেনিং বা পেশী বৃদ্ধি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত স্ট্রেন্থ ট্রেনিং মেয়েদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে পারে, যার ফলে তাদের হরমোনাল ব্যাল্যান্সে গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে।
হাড়ের শক্তি
মেয়েদের হাড়ের ঘনত্ব পুরুষদের তুলনায় কম থাকে, যা তাদের হাড়কে বেশ নাজুক করে তোলে। অতিরিক্ত চাপ বা ভুলভাবে ভারী ব্যায়াম করার ফলে মাইক্রো ফ্র্যাকচার বা হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
শরীরের অতিরিক্ত চাপ
পেশী তৈরি করার জন্য বেশ কিছু কঠোর ব্যায়াম প্রয়োজন, তবে যদি সেগুলি সঠিকভাবে না করা হয়, তা জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ভবিষ্যতে এটি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো রোগের জন্ম দিতে পারে।
ফিটনেস ট্রেইনারদের পরামর্শ-
ফিটনেস ট্রেইনাররা জানান, মেয়েরা যখন অতিরিক্ত পেশী তৈরি করতে গিয়ে নিজের শারীরিক সীমা অতিক্রম করে, তখন শরীর নানা সংকেত দিতে থাকে। কিন্তু, অনেক সময় তারা এই সংকেতগুলো উপেক্ষা করে যায়। সঠিক প্রশিক্ষণ, পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া শরীরের এই ‘সিদ্ধি’ দীর্ঘমেয়াদী বিপজ্জনক হতে পারে।
তবে সব ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। যদি সঠিক গাইডলাইন, পরিমিত ব্যায়াম এবং শারীরিক পর্যবেক্ষণ থাকে, তবে জিমে প্রশিক্ষণ সত্যিই শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল, যে ব্যায়াম তাদের জন্য উপযুক্ত, সেটি ঠিকভাবে করা। এজন্য একজন পেশাদার কোচের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষভাবে মেয়েদের জন্য একটি বড় সামাজিক চাপ রয়েছে। তাদেরকে সবসময় সুন্দর ও স্লিম দেখতে চাওয়া হয়। কিন্তু শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, শারীরিক সুস্থতা অর্জনও জরুরি। তবে, যদি সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা হয়, তবে এই চেষ্টা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।
পরিসংখ্যানবিদরা জানিয়েছেন, "যতটুকু আমরা বলি মেয়েরা বেশি কিছু অর্জন করতে গিয়ে শারীরিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, তা পূর্ণভাবে ঠিক নয়। তবে, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু সচেতনতা ও সংশোধন প্রয়োজন। মেয়েরা যদি শারীরিক শক্তি অর্জনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবান থাকতে চান, তবে সেটি অবশ্যই সম্ভব, তবে সাবধানতার সাথে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ মেয়েই জিমে যাওয়ার সময় সঠিক ডায়েট এবং বিশ্রাম গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেন না। এটি তাদের শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার কারণে পেশীতে দীর্ঘস্থায়ী টান এবং জয়েন্টে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
পরামর্শ-
জিমে ভারী ব্যায়াম করতে গিয়ে মেয়েরা ভাবতে পারেন যে, এটি তাদের 'স্টাইল' হয়ে উঠবে। কিন্তু সবার শারীরিক সক্ষমতা আলাদা, তাই শরীরের উপযোগী ব্যায়াম করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সঠিক ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুষম প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
তবে জিমে যেতে হলে শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য নয় শরীরের গভীর সুস্থতা ও পরিপূর্ণতা বজায় রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত শারীরিক চাপ বা ভুল প্রশিক্ষণের কারণে তা শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সূত্র :
১. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)
২. জাতীয় আর্থ্রাইটিস এবং পেশীবহুল কঙ্কাল এবং ত্বকের রোগ ইনস্টিটিউট (NIAMS)
৩. জার্নাল অফ স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং রিসার্চ
এসকে//