লাইফস্টাইল

পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুবিধায় পূর্ণ ঔষধি ফল ডুমুর

ডুমুর (Ficus) একাধারে পরিচিত একটি ফল এবং গাছ, যা ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ। পৃথিবীজুড়ে এর প্রচলন রয়েছে এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Ficus carica। প্রাচীনকাল থেকে ডুমুর ফল ও গাছ নানা রোগের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং আধুনিক গবেষণায়ও এটি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ডুমুরে রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে:

ভিটামিন সি : 

ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে সতেজ রাখে।

ফাইবার (আঁশ) : 

ডুমুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

পটাসিয়াম : 

ডুমুরে উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট :

এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে এবং বয়সজনিত রোগের ঝুঁকি কমায়।

ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম :

ডুমুরের ফল ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ঔষধি গুণ এবং ব্যবহৃত অংশ :

ডুমুর গাছের সমস্ত অংশই ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ।  এর ফল, পাতা এবং গাছের অন্যান্য অংশ নানা ধরনের চিকিৎসা ব্যবহারের জন্য ব্যবহার করা হয়:

কাশি এবং সর্দি : 

ডুমুরের ফল বা শুকনো পাতা কাশি ও সর্দি কমাতে কার্যকর। এর মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে।

ডায়াবেটিস :

ডুমুরের পাতা গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

হজমের সমস্যা : 

ডুমুরের ফল হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের সমস্যা : 

ডুমুরের রস ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন একজিমা, অ্যাকনে বা পিগমেন্টেশন কমাতে ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং সতেজ রাখে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ডুমুরের পুষ্টিগুণ এবং ঔষধি গুণ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ডুমুরের ফল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণে ভরপুর যা শরীরের প্রদাহ (ইনফ্ল্যামেশন) কমাতে সহায়তা করে। ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ডুমুরের ফল খেলে শরীরের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে যায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

প্রকারভেদ - 

ডুমুরের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে তবে সবচেয়ে সাধারণ প্রকারগুলো হলো:

ব্ল্যাক মিশেল : 

গাঢ় কালো ফল, মিষ্টি এবং সুস্বাদু।

গ্রিন ফিকাস : 

সবুজ ফল তবে পাকা হলে সোনালি রঙ ধারণ করে।

ইউরোপিয়ান ফিকাস :

বড় আকারের ফল এবং অধিক মিষ্টি।

খাওয়ার উপায় - 

ডুমুরকে বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। কাঁচা অথবা শুকনো ডুমুর, এমনকি জুস বা স্মুদি হিসেবে এটি খাওয়া যেতে পারে। শুকনো ডুমুরকে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন বা স্ন্যাকস তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। এটি পুডিং, পায়েস বা সালাদেও যোগ করা যেতে পারে।  যদিও ডুমুর অত্যন্ত উপকারী ফল তবে এর কিছু সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। 

অতিরিক্ত খাওয়া :

ডুমুরে বেশি পরিমাণে শর্করা এবং চিনির উপস্থিতি রয়েছে, তাই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অ্যালার্জি : 

কিছু মানুষের ডুমুরে অ্যালার্জি থাকতে পারে, যার ফলে ত্বকে লালচে ভাব বা ফোলা হতে পারে। তাই নতুন কিছু খাওয়ার আগে সবার জন্য সতর্কতা নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় সতর্কতা : 

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডুমুর খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, কারণ এতে কিছু সময় মৃদু সাইড এফেক্ট হতে পারে।

ডুমুর গাছ কম রক্ষণাবেক্ষণসহ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ফল হতে পারে। এর গাছের ফল বাজারে বিক্রি করে কৃষকরা অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এছাড়া, ডুমুর গাছের শেকড় মাটির ক্ষয় রোধে সাহায্য করে এবং পরিবেশের জন্য উপকারী।

ডুমুর একটি পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন ফল।  এর পাতা, ফল এবং গাছের অন্যান্য অংশ অনেক রোগের চিকিৎসায় সহায়ক।  তবে যেহেতু ডুমুরে শর্করা এবং চিনির পরিমাণ বেশি, অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করা উচিত। এটি আমাদের শরীরের জন্য একটি প্রাকৃতিক উপকারিতা যা সঠিকভাবে উপভোগ করলে জীবনকে আরও সুস্থ ও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে।

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন