ফ্রোজেনযুক্ত প্যাকেটবন্দি খাবার, হতে পারে ক্যান্সারও
বর্তমানে প্যাকেটবন্দি খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সুপারমার্কেট থেকে শুরু করে রাস্তার দোকান পর্যন্ত সহজলভ্য এসব খাবার আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। তবে জানেন কি যে এসব প্যাকেটজাত খাবারে লুকিয়ে থাকতে পারে একাধিক বিপজ্জনক রাসায়নিক উপাদান? বিশেষ করে হিমায়িত চিংড়ি, কাঁচা মাছ, মাংস, চকোলেট, বিস্কুট, কেক এবং প্যাকেটজাত পানীয় এসব খাবারের মধ্যে এমন কিছু উপাদান থাকতে পারে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই এসব খাবার খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
হিমায়িত চিংড়ি বর্তমানে অন্যতম বিপজ্জনক প্যাকেটজাত খাবারের মধ্যে একটি। সম্প্রতি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)-এর একটি রিপোর্টে জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি হওয়া অনেক প্যাকেটবন্দি হিমায়িত চিংড়িতে সিজিয়াম-১৩৭ নামে এক ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া গেছে। এটি এমন একটি রেডিওএকটিভ উপাদান যা পারমাণবিক চুল্লি এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
সিজিয়াম-১৩৭ মানুষের শরীরে প্রবাহিত হলে তা বিটা এবং গামা রশ্মির বিকিরণ করে। এর ফলে কোষের বিভাজন অনিয়মিত হয়ে যায়, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ফলে, এটি শরীরে ক্যানসার, স্নায়বিক সমস্যা, এবং প্রজনন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ক্ষতিকর প্রভাব :
ক্যানসারের ঝুঁকি :
সিজিয়াম-১৩৭ যখন শরীরে প্রবাহিত হয়, তখন তা কোষের বিভাজনকে অনিয়মিত করে তোলে, যার ফলে ক্যানসার হতে পারে। বিশেষত যারা দীর্ঘ সময় ধরে এই পদার্থের প্রভাবে থাকবেন, তাদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
স্নায়বিক সমস্যা:
তেজস্ক্রিয় পদার্থ মানুষের স্নায়বিক ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্রম এবং স্মৃতি কমে যেতে পারে।
প্রজনন সমস্যা:
এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রজনন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে গর্ভধারণ বা বাচ্চা হওয়া সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান :
হিমায়িত চিংড়ি ছাড়াও, প্যাকেটজাত খাবারে আরও অনেক ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে। বিশেষ করে প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষণকারী উপাদানগুলো শরীরের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। কিছু সাধারণ ক্ষতিকর উপাদান হলো:
সোডিয়াম বেনজোয়েট (INS 211):
এটি একটি সাধারণ প্রিজারভেটিভ যা বেশিরভাগ চকোলেট, বিস্কুট, কেক, এবং প্যাকেটজাত পানীয়তে ব্যবহৃত হয়। এটি স্থূলতা, এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডিফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার) এবং অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
সোডিয়াম নাইট্রাইট (INS 250):
প্রসেসড মিট (যেমন সসেজ বা হ্যাম) ও ফাস্টফুড-এ এ উপাদানটি থাকে। এটি ক্যানসার এবং স্নায়বিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং মস্তিষ্কের সচলতা কমিয়ে দিতে পারে।
আইসোটোপ ৩২০ এবং ৪৭৭ (INS 320, 477):
এগুলো বিভিন্ন তেল এবং প্যাকেটজাত খাবারে ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘসময় ধরে এটি ব্যবহারে লিভারের সমস্যা, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
কাঁচা মাছ বা মাংস:
বিশেষত যদি তা হিমায়িত বা প্যাকেটজাত হয়, তাতে অনেক সময় বিষাক্ত রাসায়নিক থাকতে পারে। প্যাকেটজাত তেলেও রাসায়নিকের মাত্রা থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সতর্কতা :
প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার আগে কিছু সতর্কতা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
প্যাকেটের লেবেল পড়ুন:
প্যাকেটজাত খাবার কেনার সময় তার লেবেল ভালোভাবে পড়ুন। এতে খাদ্য উপাদান এবং প্রিজারভেটিভের উল্লেখ থাকে, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
কোথা থেকে এসেছে, সেটা জানুন:
খাবারটি কোথা থেকে আমদানি হয়েছে এবং এতে কি ধরনের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, তা জানাটা জরুরি। আপনার দেশের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা এবং FDA এর রিপোর্টগুলো নিয়মিত পড়ুন।
প্রাকৃতিক খাবারের দিকে নজর দিন:
যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক বা অর্গানিক খাবার বেছে নিন, যেগুলিতে কম প্রিজারভেটিভ এবং রাসায়নিক থাকে।
প্যাকেটজাত খাবার অনেক সুবিধা দিলেও, এতে লুকিয়ে থাকতে পারে মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান। বিশেষ করে হিমায়িত চিংড়ি, প্রসেসড মিট, চকোলেট, বিস্কুট এমন সব খাবার আমাদের শরীরের জন্য এক গোপন বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তেজস্ক্রিয় পদার্থ এবং প্রিজারভেটিভগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, যা ক্যানসার, স্নায়বিক সমস্যা, এবং প্রজনন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এসকে//