গাড়িতে থাকা গোপন হুমকি ক্ষতিকর গ্যাস, যা আপনি জানেনই না
আমরা অনেকেই জানি না গাড়ির ভেতরের বাতাস আমাদের শরীরের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। প্রতিদিন গাড়িতে চলাফেরা করলেও প্রায়ই আমরা লক্ষ্য করি না যে, সেখানে নানা ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস ভীষণভাবে জমে থাকতে পারে। যা আমরা প্রায়শই বুঝতেও পারি না এই গ্যাসগুলো আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য এক লুকানো হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে দীর্ঘসময় গাড়িতে থাকার সময় এই গ্যাসগুলো শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয়ে আমাদের অসুস্থ করতে পারে। এমনকি এই গ্যাসগুলো আমাদের শারীরিক অবস্থাকে বিপন্ন করে তোলে। তাই কীভাবে আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারি চলুন জেনে নেই।
ক্ষতিকর গ্যাসের প্রকার :
কার্বন মনোক্সাইড (CO)
গাড়ির ইঞ্জিন থেকে নির্গত একটি গন্ধহীন এবং অদৃশ্য গ্যাস। এটি ত্বকে দেখা না যাওয়ার কারণে গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষ সহজেই বুঝতে পারে না। যখন গাড়ির এক্সস্ট সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ না করে, এই গ্যাসটি গাড়ির ভেতরে জমে গিয়ে শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবাহিত হতে পারে। এতে রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অক্সিজেন পরিবহণে বাধা সৃষ্টি হয়, যার ফলে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, এবং মাথা ঘোরা অনুভূতি হতে পারে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদী হলে, এটি মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
• লক্ষণ: মাথাব্যথা, বমি, চোখে ঝাপসা দেখাও অন্যতম লক্ষণ। (Source: Centers for Disease Control and Prevention - CDC)
নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO₂)
এটি মূলত গাড়ির এক্সস্ট থেকে নির্গত হয় এবং বাইরের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে গাড়ির ভেতরে যদি এটি আটকে যায়, তাহলে এটি শ্বাসনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজারে শ্বাসনালী উত্তেজিত হয়ে ফুসফুসের সমস্যা, অ্যাজমা এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
• লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, কাশি, সর্দি, এবং শ্বাসনালীতে জ্বালা। (Source: World Health Organization - WHO)
ভলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড (VOCs)
গাড়ির ইঞ্জিন, প্লাস্টিক, এবং কাচের পৃষ্ঠ থেকে নির্গত এই ক্ষতিকর গ্যাসটি গাড়ির পুরনো পোড়ানোর গন্ধ বা নতুন গাড়ির গন্ধের জন্য দায়ী। তবে, দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজারের ফলে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, ত্বকের সমস্যা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
• লক্ষণ: মাথাব্যথা, চোখে জ্বালা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, অ্যালার্জি সমস্যা বৃদ্ধি। (Source: U.S. Environmental Protection Agency - EPA)
ওজোন (O₃)
গাড়ির এক্সস্ট থেকে নির্গত এই গ্যাসটি, যা প্রাকৃতিকভাবেও তৈরি হয়, কিন্তু এটি উচ্চ পরিমাণে গাড়ির ভেতরে মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ওজোন শ্বাসনালীতে জ্বালা সৃষ্টি করে এবং ফুসফুসের কার্যক্রমে বাধা দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য শ্বাসনালী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
• লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, কাশি, ত্বকে জ্বালা, বুকের মধ্যে চাপ অনুভব করা। (Source: American Lung Association)
গাড়ির ভেতরে গ্যাসগুলো যেভাবে জমে থাকে
গাড়ির ভেতরের ক্ষতিকর গ্যাসের উপস্থিতি মূলত গাড়ির এক্সস্ট সিস্টেম এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। যদি এক্সস্ট সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ না করে, অথবা বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা দুর্বল থাকে, তবে এসব গ্যাস গাড়ির ভেতরে জমে থাকতে পারে। গরমের মধ্যে দীর্ঘসময় গাড়ি বন্ধ রেখে রাখা হলে, গ্যাসগুলোর পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে, যা শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হতে পারে।
যেভাবে সনাক্ত করবেন এবং সুরক্ষিত থাকবেন :
বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন
গাড়ি চালানোর সময় সর্বদা ভেন্টিলেশন সিস্টেম চালু রাখুন। এতে গাড়ির ভিতরের বাতাস তাজা থাকবে এবং ক্ষতিকর গ্যাস বাইরে বেরিয়ে যাবে।
নিয়মিত গাড়ির সার্ভিসিং করুন
গাড়ির ইঞ্জিন, এক্সস্ট সিস্টেম এবং ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করুন। এই নিয়মিত সার্ভিসিং গাড়ি থেকে বের হওয়া ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ কমাতে সহায়ক হবে।
লক্ষণ বুঝে সতর্ক থাকুন
যদি আপনি গাড়ির ভেতর মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা বমি বোধ করেন তাহলে তা সম্ভবত গ্যাসের প্রভাবে হতে পারে। এমন অবস্থায় তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে বের হয়ে ফ্রেশ বাতাসে শ্বাস নিন।
গাড়ির নির্গমন গ্যাস চেক করুন
গাড়ির এমিশন পরীক্ষা করুন। এটি আপনাকে জানাবে, আপনার গাড়ি থেকে কোন ধরনের গ্যাস নির্গত হচ্ছে এবং সেগুলোর প্রভাব কতটা বিপজ্জনক।
গাড়ির ভেতরে ক্ষতিকর গ্যাসের উপস্থিতি একটি গোপন হুমকি হতে পারে যা আপনার অজান্তেই ঘটে। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনি এই সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। নিয়মিত গাড়ির সার্ভিসিং, সঠিক ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা এবং গ্যাসের উপস্থিতি চেক করা, এসবই আপনার সুস্থতায় সহায়ক হতে পারে।
এসকে//