স্বামী-স্ত্রী দেখতে ভাই-বোনের মতো, যা বলছে বৈজ্ঞানিক ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের মধ্যে অনেক সময়ে ভাই-বোনের মতো মিল খুঁজে পান। এটি শুধু শারীরিক চেহারা বা আচরণের মিলই নয় বরং, সম্পর্কের গভীরতা এবং মানসিক মিলও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই সাদৃশ্যের পেছনে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণ, যা সম্পর্ককে আরও মজবুত ও স্থিতিশীল করে তোলে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা :
বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষ এমন সঙ্গী পছন্দ করে যার শারীরিক বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য তার নিজের সঙ্গে মিলে। এই প্রবণতাটিকে 'assortative mating' বলা হয় যার মানে হলো মানুষ এমন সঙ্গী খুঁজে নেয় যার বৈশিষ্ট্য তার নিজের সাথে মেলে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে এই ধরনের মিল দেখতে পাওয়া যায় বিশেষ করে যখন তারা দীর্ঘসময় একে অপরের সাথে সময় কাটায়। সেক্ষেত্রে তাদের চেহারা ও আচরণে পারিবারিক সাদৃশ্য দেখা যায়।
চেহারার মিল :
অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে অনেক সময় এমন চেহারার মিল দেখা যায় যা ভাই-বোনের মতো হতে পারে। অনেক মহিলার প্রেমিক বা স্বামী তাদের ভাইয়ের মতো দেখতে হতে পারে যা অবচেতন মনস্তত্ত্বের ফল। মানুষ সাধারণত পরিচিত বা কাউকে আকর্ষণ করে এবং এই উপাদানগুলো প্রেম বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি এমন একটি প্রবণতা যেখানে আমরা স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মতো কাউকে আকর্ষণ করি।
অভ্যাসগত মিল :
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের অভ্যন্তরীণ অভ্যাস, অঙ্গভঙ্গি, মুখাবয়ব, হাসির ধরন এবং চলাফেরায় একে অপরকে অনুকরণ করে। দীর্ঘসময় একসঙ্গে থাকার ফলে তাদের মধ্যে আরও মিল দেখা যায়। যখন একজন মানুষ তার সঙ্গীকে ভালোবাসে তখন সে তার আচরণ, চেহারা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়। এটি সম্পর্কের মধ্যে আরও গভীরতা এনে দেয় এবং একে অপরকে ভাই-বোনের মতো অনুভূত করে তোলে।
মনস্তত্ত্বের দৃষ্টিকোণ :
মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ সাধারণত পরিচিত বা নিকটজনদের সাথে বেশি স্বস্তিবোধ করে। তাই অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী এমন সঙ্গীকে আকর্ষণ করেন যার বৈশিষ্ট্য বা আচরণ তাদের পরিবারের সদস্যদের মতো মনে হয়। এই সম্পর্কের মধ্যে ভাই-বোনের মতো সাদৃশ্য সৃষ্টি হয় যা সম্পর্কের মানসিক গভীরতা এবং স্বস্তি বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণা এবং পরিসংখ্যান :
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলারা সাধারণত এমন পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হন যাদের চেহারা তাদের ভাইয়ের সঙ্গে কিছুটা মিল রাখে। এটি একটি অবচেতন মনস্তত্ত্বের ফল হতে পারে, তবে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ প্রবণতা। সময়ের সাথে সম্পর্কের গভীরতা এবং পারিবারিক সাদৃশ্য আরও প্রকট হতে পারে যা মানসিকভাবে সম্পর্ককে আরও সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করে তোলে।
স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে ভাই-বোনের মতো সাদৃশ্য হওয়া মূলত তাদের সম্পর্কের গভীরতা এবং মানসিক স্বস্তির প্রতিফলন। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি শারীরিক, আচরণগত এবং অভ্যন্তরীণ মিলের কারণে ঘটে, যা সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করে তোলে। একে অপরের মাঝে এই ধরনের মিল থাকা অবচেতন মনস্তত্ত্ব এবং পরিচিতির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রক্রিয়া, যা স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ এবং গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে।
এসকে//