সুস্বাস্থ্যের গোপন উপাদান ভাতের মাড়
বাঙালি খাবারের অঙ্গ হয়ে থাকা ভাতের মাড় শুধু স্বাদে সাদামাটা নয় বরং, এক অনন্য পুষ্টির খনি। ভাত রান্নার পর ভাতের কিছু অংশের সাথে মিশে থাকা এই তরলটি নানা স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর। বেশিরভাগ মানুষ ভাতের সঙ্গে মাড় খেয়ে থাকেন। কিন্তু ভাতের মাড়ের লুকানো স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে আমরা কতটা জানি?
আজ আমরা জানবো কেন ভাতের মাড় এত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর গুণাগুণ কেন আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় জায়গা পেতে পারে। ভাতের মাড় হলো ভাত রান্নার পর যে তরল বের হয় তা সাধারণত হালকা সাদা বা গোলাপি রঙের হয় এবং স্বাদে মিষ্টি হতে পারে। অনেকেই এটিকে স্রেফ 'অতিরিক্ত তরল' হিসেবে দেখেন। কিন্তু এটি আসলে অমূল্য পুষ্টির উৎস। বহু বছর ধরেই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই মাড় স্বাস্থ্যসচেতনতার অংশ হয়ে এসেছে।
উপকারিতা -
হজমে সহায়ক:
ভাতের মাড়ে উপস্থিত সহজপাচ্য শর্করা দ্রুত হজম হয়, যা শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। এটি পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে এবং হজমক্রিয়া সুস্থ রাখে।
শক্তি ও এনার্জি প্রদান:
মাড়ে থাকা শর্করা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়ে শক্তি তৈরি করে। গরমকালে, যখন শরীরের প্রচুর শক্তি প্রয়োজন হয়, তখন ভাতের মাড় বিশেষভাবে উপকারী।
পানির চাহিদা পূরণ:
ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে। এর মাধ্যমে শরীরের ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ত্বক ও চুলের উন্নতি:
মাড়ে থাকা ভিটামিন B2 (রিবোফ্লাভিন) এবং ভিটামিন C ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের দাগ-ছোপ কমাতে সাহায্য করে।
অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:
ভাতের মাড়ে থাকা ভিটামিন B কমপ্লেক্স এবং অন্যান্য অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ফ্রি র্যাডিকেল থেকে সুরক্ষা দেয়। এর ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং অনেক রোগের প্রতিরোধ সম্ভব হয়।
সতর্কতা -
ভাতের মাড় যদিও অত্যন্ত উপকারী, তবে এতে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যদি মাড় দীর্ঘ সময় রেখে দেওয়া হয় বা ভালোভাবে গরম না করা হয়, তবে এতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি হতে পারে, যা পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, মাড় খাওয়ার আগে তা তাজা এবং ভালোভাবে গরম করা উচিত।
ভাতের মাড়ের বিভিন্ন ব্যবহার -
গরম মাড়:
গরম মাড় শরীরের জন্য উপকারী, বিশেষ করে গরমের দিনে। এটি শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।
মাড়ের পিঠা:
শীতকালে ভাতের মাড় দিয়ে বিশেষ ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়, যা সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। এই পিঠাগুলো সহজপাচ্য শর্করা সরবরাহ করে।
মাড়ের শেক বা গোলগোলা:
ভাতের মাড় দিয়ে শেক বা গোলগোলা তৈরি করে অনেক সংস্কৃতিতে এটি স্বাস্থ্যকর ও শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভাতের মাড় শরীরের প্রাকৃতিক শক্তির একটি অন্যতম উৎস। এটি নিয়মিত খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সহজেই পূর্ণ হতে পারে। বিশেষত, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দূর করতে ভাতের মাড় অনেক সহায়ক হতে পারে। ভাতের মাড় যেভাবে আমাদের খাবারের অংশ হয়ে থাকে, সেভাবেই এটি সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য এক উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে।
ভাতের মাড় একেবারেই যেন অগ্রাহ্য করার মতো কিছু নয়। যদিও এটি সাধারণত আমাদের রান্নাঘরের অবহেলিত অংশ হয়ে থাকে এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা পুষ্টিগুণের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। ভাতের মাড় আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় স্থান পেলে শুধু শরীরের পানির চাহিদা পূরণ হবে না, ত্বক, চুল, হজম এবং শক্তি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সঠিকভাবে এবং সচেতনভাবে মাড় খেলে আপনি আপনার স্বাস্থ্যকে আরও সুন্দর এবং সুস্থ রাখতে পারবেন।
এসকে//