অপূর্ব-সাদিয়ার অভিনয়ে নতুন প্রেমের ভাষা
এটি শুধুমাত্র একটি নাটক নয় একটি অন্যরকম অনুভূতির যাত্রা। এক প্রেমিকের যাত্রা, এক জীবনের যাত্রা। ‘দেরি করে আসবেন’ পরিচালনা করেছেন মুরসালিন শুভ, এবং এই নাটকটি শুধু প্রেমের গল্পই বলছে না বরং, হৃদয়ের গভীরতা, সময়ের অদ্ভুত নিয়ম এবং ভালোবাসার শক্তি ফুটিয়ে তুলছে।
৩১ জুলাই ক্যাপিটাল ড্রামা ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাওয়ার পরপরই নাটকটি দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। নাটকটির ভিউ ইতিমধ্যেই চার মিলিয়ন পেরিয়ে গেছে এবং সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম স্টোরি, রিলস সব জায়গায় এটি ছড়িয়ে পড়েছে। দর্শকরা শুধু নাটকটি দেখছেন না, তারা এটি অনুভবও করছেন।
নাটকটির তিনটি মূল চরিত্র - অভিক, কানন, এবং গেট এই তিনটি উপাদানই মূলত নাটকের ভিত্তি।
অভিক চরিত্রে অপূর্ব, যিনি একজন সাংবাদিক। সাংবাদিকতার কঠিন দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যাচেলর জীবন তাকে এক ধরনের অস্থিরতায় রেখেছে। সাংবাদিকতা ও সত্যের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা, ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ এই দুটি দিকই অপূর্ব তাঁর অভিনয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। অপরদিকে, কানন চরিত্রে সাদিয়া আয়মান যিনি জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং নিজস্ব পৃথিবী নিয়ে এক অসাধারণ মিষ্টি ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
এরা একে অপরকে জানত না। অভিক প্রায়ই দেরি করে বাড়ি ফিরতেন এবং গেট বন্ধ হয়ে যেত। কাননের বাবা ছিলেন সহানুভূতিশীল এবং অভিককে কোনোরকম বাধা ছাড়াই গেট খুলে দিতেন। এই ছোট্ট সাদাসিধে মুহূর্ত থেকেই এক অদ্ভুত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। এখানে নাটকের প্রথম কদম থেকে শুরু করে পর্দায় অপূর্ব এবং সাদিয়ার অভিনয় যেন এক সুরেলা সঙ্গীত যেখানে তাদের নরম কথা, মৃদু হাসি এবং চোখের ভাষা এক অন্যরকম অভ্যন্তরীণ সুরে পরিণত হয়, যা দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে।
‘দেরি করে আসবেন’ শুধুমাত্র এক প্রেমের গল্প নয়। এটি সম্পর্কের ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা, একে অপরকে জানার, প্রত্যাশা ও অভিমান চুরমার হওয়ার গল্প।
অভিক এবং কাননের প্রথম সম্পর্ক গেট খোলার মাধ্যমে একটি স্বাভাবিক ও সহজ মুহূর্ত হলেও, এটি এক সুপ্ত ভালোবাসার জন্ম ছিল। নাটকটি দ্রুত কোনও তাড়াহুড়ো বা চাপ তৈরি না করে, সব কিছু ধীরে ধীরে হতে থাকে।
কাননের স্নেহ ও যত্ন অভিকের প্রতি এক ধরনের সুগন্ধি ভালোবাসা নিয়ে আসে, যা কখনো মুখে প্রকাশিত হয় না, কিন্তু ধীরে ধীরে অভিকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। একদিন যখন অভিক জ্বরে আক্রান্ত হয়, তখন কানন নিজে এসে তাকে ওষুধ দেয়, এই মুহূর্তটি যেন অভিকের জীবনে নতুন একটি ‘কানন’-এর সৃষ্টি হয়ে যায়।
নাটকটির প্রতিটি চরিত্রই সম্পর্কের স্বাভাবিকতা এবং তার গভীরতা তুলে ধরেছে। এখানে কোনও তাড়াহুড়ো নেই, সব কিছু সময় নিয়ে ঘটে। এটি জীবনেরই একটি বাস্তবতা যে সম্পর্ক যত ধীরে গড়ে ওঠে, ততই তার মূল্য।
নাটকটির মধ্যে যে দার্শনিকতা রয়েছে, তা দর্শকদের ভাবনার খোরাক দেয়। কানন যখন বলে, “ফুল ফোটার জন্য বসন্তের অপেক্ষা করতে হয়। সময়ের আগে কিছু ফোটে না।”
এটি একটি শক্তিশালী বার্তা, যা কেবল প্রেমের জন্যই নয়, জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্যও প্রযোজ্য। এটি বলে যে, জীবনে কোনও ভালোবাসা বা সম্পর্ক তৈরি হতে সঠিক সময়ের প্রয়োজন। তাড়াহুড়ো করলে কিছুই গড়ে ওঠে না। ভালোবাসা কেবল তখনই আসবে যখন আমরা তার জন্য প্রস্তুত থাকব।
এই সংলাপটি নাটকের মূল ভাবনার প্রতিফলন, যা দর্শকরা গভীরভাবে অনুভব করেন এবং জীবনের নানা পরিস্থিতি এটি তাদের কাছে একটি উপদেশের মতো হয়ে দাঁড়ায়।
অপূর্বের চরিত্র অভিক এক সাংবাদিক। যিনি শুধু পেশাদারিত্বে বিশ্বাসী নন বরং, তার মানবিকতা ও সৎ সাংবাদিকতার প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা অনুভব করেন। তার অভিনয়ে যন্ত্রণার চাপ, কষ্ট, আর একজন ব্যাচেলরের নিঃসঙ্গতা যেন ফুটে উঠেছে। অপূর্ব পুরো নাটকটিতে ব্যাচেলর সাংবাদিকের অস্থিরতা, তার সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং ব্যক্তিগত স্নেহের মিশেল হিসেবে চরিত্রটিকে অত্যন্ত জীবনবোধের সাথে চিত্রিত করেছেন।
এদিকে, কানন চরিত্রে সাদিয়া আয়মানও অভিনয় করেছেন এক অনন্য দক্ষতায়। বিশেষত যখন তিনি বলেন, “ফুল ফোটার জন্য বসন্তের অপেক্ষা করতে হয়”। এই উক্তির মধ্যে যে গভীরতা রয়েছে, তা সাদিয়া তার কণ্ঠস্বর, চোখের ভাষা এবং মৃদু হাসির মাধ্যমে পর্দায় প্রতিস্থাপন করেছেন। তার অভিনয় দর্শকদের হৃদয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়।
‘দেরি করে আসবেন’ শুধুমাত্র একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি সম্পর্কের ধৈর্য এবং সময়ের মূল্য শেখায়। দর্শকরা নাটকটি দেখে তাদের নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকেও খুঁজে পাচ্ছেন। তারা বুঝতে পারছেন, সম্পর্ক শুধুমাত্র ভালোবাসা নয়, সেটি সময়, অপেক্ষা এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়াও।
এক দর্শক রনি রায় মন্তব্য করেছেন, “আজ দেরি করে আসবেন কিন্তু; সাদিয়ার হাসি এবং অপূর্বের প্রেজেন্স এরা একসঙ্গে মুগ্ধতার এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। অসম্ভব সুন্দর নাটক।”
আরেক দর্শক মেহেদী হাসান বলেছেন, “সাদিয়া আয়মান এবার একেবারে পরিণত। অপূর্ব তো যেন আমাদের সবার পুরনো বন্ধু। মনে হচ্ছে, এই চরিত্রগুলো আমাদের জীবনের অংশ।”
এসকে//