খাবারের পর ঘুমের রহস্য, যেভাবে এড়ানো যায়
দুপুরে খাবারের পর অনেকেরই ঘুমানো বা অলস অনুভূতি হয়, যা অনেক সময় শারীরিক সমস্যার সংকেত মনে হতে পারে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এটি কোনও রোগ নয় বরং, শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং আমাদের জৈবিক প্রক্রিয়ার অংশ। বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এটিকে "পোস্ট প্র্যান্ডিয়াল ড্রাউজিনেস" (Postprandial Drowsiness) বলা হয়, যার মানে হলো খাওয়ার পর তন্দ্রাচ্ছন্নটা।
খাবার খাওয়ার পর এই অনুভূতি ঘটে কারণ, হজমের জন্য শরীরের রক্ত প্রবাহ পেটে চলে যায়, ফলে মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ কিছুটা কমে যায় এবং অলসতার অনুভূতি হয়। বিশেষত উচ্চ প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেলে সেরোটোনিন হরমোনের পরিমাণ বাড়ে, যা মস্তিষ্কে ঘুমের সংকেত পাঠায়। এছাড়া অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যেমন ভাত, রুটি, আলু বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের কারণে শরীরে ইনসুলিন বাড়ে, যা ট্রিপ্টোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিডকে সক্রিয় করে এবং এই অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন নামে ঘুম নিয়ন্ত্রণকারী নিউরোট্রান্সমিটার উৎপন্ন হয়।
এটি একটি শারীরিক প্রক্রিয়া হলেও কিছু কারণ যেমন - খারাপ খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত ঘুম বা হজমের সমস্যা, এই অনুভূতি আরও বাড়াতে পারে। তবে এটি কোনও রোগের লক্ষণ নয় এবং সাধারণত শরীরের নিজস্ব জৈবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত। অনেক বিশেষজ্ঞ জানান, দুপুরে শরীরের নিজস্ব "ঘুমিয়ে পড়ার সময়" থাকে, যা শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ির অংশ। এটি খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বরং, একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা শরীরের বিশ্রাম এবং ক্লান্তি কাটানোর জন্য প্রয়োজনীয়।
তবে সুষম ও হালকা খাবার খেলে তন্দ্রাচ্ছন্নটা কমানো যেতে পারে। খাবারের পর একটু হাঁটাহাঁটি বা অল্প অল্প করে খাওয়া এই অনুভূতি কাটাতে সহায়ক হতে পারে। তবে যদি অতিরিক্ত ঘুম, ক্লান্তি বা দীর্ঘস্থায়ী হজমের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
এসকে//