আজ পবিত্র আশুরা
মুসলিম উম্মাহর অন্যতম পবিত্র ও সম্মানিত দিন আজ
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অন্যতম পবিত্র ও সম্মানিত একটি দিন। ধর্মীয় বিশ্বাস, ঐতিহাসিক ঘটনা, বিশেষ ইবাদতের দিন-সব মিলিয়ে আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র দিন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি, আল্লাহর কিতাবে, যেদিন তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ (সূরা আত-তাওবা: ৩৬)
মহররম হচ্ছে সেই সম্মানিত বা পবিত্র চার মাসের একটি, যাকে আরবিতে বলা হয় ‘আশহুরে হুরুম’। এই মাসে গুনাহ, অন্যায় ও যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আর ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের পর আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো মহররমের রোজা।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩) অন্য ৩ মাস হলো- জিলকদ, জিলহজ, ও রজব। এসব মাসেও যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৬১ হিজরির (৬৮০ খ্রিস্টাব্দে) ১০ মহররমে ইরাকের করবালা প্রান্তরে মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র (কন্যার পুত্র) হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবার ইয়াজিদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে শহিদ হন। তাদের আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরকালীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয়ের প্রতীক হয়ে আছে।
হোসাইন (রা.)-এর সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল খিলাফত ব্যবস্থার পুনর্জীবন। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে হোসাইনের (রা.) স্ত্রী, ছেলে, বোন ও ঘনিষ্ঠ ২০০ অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কুফার উদ্দেশে রওয়ানা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ও তার বাহিনী তাকে বাধা দেন। রক্তপাত ও খুনাখুনি বন্ধের উদ্দেশে হজরত হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব দেন। ১. তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেয়া হোক। ২. তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেয়া হোক। ৩. ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক।
কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হজরত হোসাইন (রা.) ঘৃণা ভরে এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।
মহররমের দশম দিন সকালে শুরু হয় নিষ্ঠুর যুদ্ধ। হজরত হুসাইন (রা.) বীরত্বের সঙ্গে ইবনে জিয়াদের বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত নির্মমভাবে ইমাম হুসাইনকে শহীদ করা হয়। তাঁর মাথা বিচ্ছিন্ন করে বর্শার ফলকে বিদ্ধ করে ইবনে জিয়াদের বাহিনীর সীমার। হযরত হুসেইন (রা.)’র একমাত্র ছেলে ছাড়া, পরিবারের শিশু, কিশোর, নারীসহ সবাই শাহাদাত বরণ করেন।
শুধু করবালার কারণে নয়, বহু ঐতিহাসিক ঘটনার জন্য আশুরার দিনটি স্মরণীয়। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে। যেটি মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী কেয়ামতের দিন।
এ দিনই হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। হজরত নূহ (আ.) মহাপ্লাবনের পরে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেছেন। এদিনই হজরত ইব্রাহিম (আ.) অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এদিন হজরত মুসা (আ.) তুর পর্বতে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। হজরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন। এ দিনই ইসা (আ.) কে আকাশে তুলে নিয়েছেন মহান আল্লাহ। এছাড়াও অনেক মহান বীরের উল্লেখযোগ্য ঘটনার জন্য দিনটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলদেশে আশুরার দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ছুটি হিসেবে পালিত হচ্ছে।
এমএ//