আন্তর্জাতিক

মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণ

'ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ধ্বংস হয়নি'

সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হামলায় ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। তাদের তাদের মতে এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস না করলেও, তা কয়েক মাসের জন্য থমকে দিয়েছে।

বুধবার (২৫ জুন) এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। সিএনএন বলছে, সাতটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই মূল্যায়ন এর আগে প্রকাশিত হয়নি।

গেল শনিবার (২১ জুন) যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বাংকার-বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই অভিযানকে ‘অসাধারণ সাফল্য’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে তিনদিন পরই পেন্টাগনের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এই আক্রমণের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) তৈরি করা প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মূল মজুদ ও সেন্ট্রিফিউজ ইউনিটগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে। হামলার ক্ষয়ক্ষতি মূলত স্থলভাগে অবকাঠামোতে সীমাবদ্ধ, ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো রক্ষা পেয়েছে।

সিবিএস নিউজকে কয়েকজন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরান আগেভাগেই ইউরেনিয়ামের একটি অংশ অন্যত্র সরিয়ে নেয়, যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও সীমিত থাকে।

হোয়াইট হাউস এই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করার প্রচেষ্টা। এদিকে ট্রাম্প নিজেও ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমস ইচ্ছাকৃতভাবে সামরিক সাফল্যকে খাটো করে দেখাচ্ছে।

অন্যদিকে, পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জেফ্রি লুইস স্যাটেলাইট চিত্র পর্যালোচনা করে জানান, ‘ফোরদো, ইসফাহান ও পারচিনসহ বেশ কয়েকটি কৌশলগত স্থাপনা এখনও অক্ষত রয়েছে, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির দ্রুত পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে।’

সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, ফোর্দোর পারমাণবিক কেন্দ্রে প্রবেশপথের কাছে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণস্থলের চিহ্ন এবং ধ্বংসাবশেষ। যদিও এসব ছবি দেখে ভূগর্ভস্থ কাঠামোর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করা কঠিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে কিছুটা সময়ের জন্য পিছিয়ে দিতে পেরেছে ঠিকই, তবে স্থায়ীভাবে পারমাণবিক কার্যক্রম থামানো সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে ইরান কবে নাগাদ পূর্ণ সক্ষমতায় ফিরে আসবে, তা নির্ভর করছে খনন ও মেরামতের গতির উপর।

 

এমএ//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন