ট্রাম্পের তদন্তে কাজ করা ডজনখানেক আইনজীবী বরখাস্ত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলায় কাজ করা এক ডজনের বেশি বিচার বিভাগের আইনজীবীকে বরখাস্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
বুধবার (২৮ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টির সাথে পরিচিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বস্ততা নিয়ে সন্দেহের কারণে।
ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস ম্যাকহেনরি একটি চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিচারে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায়, আমি মনে করি না যে রাষ্ট্রপতির এজেন্ডা বাস্তবায়নে আপনাদের ওপর পুরোপুরি ভরসা করা সম্ভব।’
বরখাস্ত করার পক্ষে সাফাই গেয়ে চিঠিতে ম্যাকহেনরি আরও উল্লেখ করেছেন, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রধান নির্বাহীর সমতুল্য।

এ পদক্ষেপ এমন সময় এসেছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল দাঙ্গার আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে তদন্ত জোরদার করছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসন বিশেষ প্রকল্প হিসেবে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলা পরিচালনায় বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথের সঙ্গে কাজ করছিলেন চাকরিচ্যুত আইনজীবীরা। তবে গেলো নভেম্বরে ট্রাম্প জয়লাভ করলে মামলাগুলো বাতিল করে দেয় বিচার বিভাগ। আর চলতি মাসে পদত্যাগ করেছেন স্মিথ।
ওয়াশিংটন ডিসি’র অন্তর্বর্তী মার্কিন অ্যাটর্নি এড মার্টিন নির্দেশ দিয়েছেন যে, প্রসিকিউটররা দাঙ্গার সময় ফাইল করা মামলাগুলোর নথি এবং সংশ্লিষ্ট সব তথ্য জমা দেবে। মার্টিন এই উদ্যোগকে তথ্য-অনুসন্ধান মিশন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি আমাদের অফিসের একটি বড় ব্যর্থতার শিকড় খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।’
মার্টিন আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়, যা প্রসিকিউটরদের কিছু দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার ক্ষমতা সীমিত করেছিল, সেই প্রসঙ্গটি পুনর্বিবেচনা করা হবে। প্রসিকিউটরদের অনেকে তাদের প্রতিরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছেন।
মার্টিন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলো প্রশংসা করে বিশেষভাবে সমর্থনও করছেন।
প্রসিকিউটরদের বরখাস্ত এবং নথি তদন্তের এ পদক্ষেপ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিচার বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘এটি শুধু বিশাল সম্পদের অপচয়ই নয়, বরং কর্মকর্তাদের কাজের স্বাধীনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
চার বছর হোয়াইট হাউজের বাইরে থাকাকালীন সময়ে আইনি উপায়ে ট্রাম্পকে কাবু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই ব্যক্তিদের একহাত দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা। সোমবারের ঘটনায় প্রমাণ হলো, হুমকি বাস্তবায়নে পিছপা হবে না প্রশাসন।
ট্রাম্পকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে বক্তন্য দিয়েছিল বিচার বিভাগ। ফলে, তাদের প্রতি ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের আদায়-কাচকলায় সম্পর্ক হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফ্লোরিডার ব্যক্তিগত ক্লাবে গোপন নথি রাখার ও ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যয়নে হস্তক্ষেপের অভিযোগে মামলা করেছিলেন স্মিথ। ট্রাম্প এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, এসব মামলা আইন ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের উদাহরণ। নির্বাচনে ট্রাম্প জয়লাভ করার পর মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেন স্মিথ।
উল্লেখ্য, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন ৬ জানুয়ারির মামলাগুলো পুনর্বিবেচনা এবং এর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের উপর কঠোর নজরদারি চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ট্রাম্পের এই অবস্থান তার প্রশাসনের "প্রতিশোধের রাজনীতি" এবং ভবিষ্যতে এমন পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এসি//